
![]() |
থমাস এন্ড্রু |
এই টাইটানিক যখন বানানো হয়েছিল তখন এর ডিজাইনার “থমাস এন্ড্রু” দাবি করেছিলেন এই টাইটানিক কোন দিন ডুবানো সম্ভব না। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে তিনি কেন এরকম দাবি করেছিলেন। আসল বিষয়টা ছিল এই টাইটানিকের নকশায়।

টাইটানিককে বানাবার সময় একে এমন ভাবে বানানো হয়েছিল যে এর মধ্যে ছিল অনেক গুলি কম্পার্টমেন্ট, যে গুলি একটি আরেকটি থেকে আলাদা এবং মধ্যবর্তি যাতায়তের দরজা গুলিতে ছিল সম্পূর্ন পানি রোধক দরজার ব্যাবস্থা। এই রকম কম্পার্টমেন্ট যুক্ত করা হয় প্রথমে টাইটানিকে আর এখন পর্যন্ত বর্তামান বিশ্বের প্রতিটি জাহাজে এবং ডুবজাহাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে এই কম্পার্টমেন্ট ব্যাবস্থা।

![]() |
১৯১১ সালে নিউয়র্কে অলিম্পিক |
![]() |
১৯১০ সালে অলিম্পিকের উদ্ভোদনি অনুষ্ঠান |
![]() |
অলিম্পিকের The Grand Staircase |
![]() |
১৯১১ সালে বেলফাষ্টে অলিম্পিক |

![]() |
অলিম্পিক বামে এবং টাইটানিক ডানে |
কি ভাবছেন? এত বড় জাহাজ আর কেউ পার্থক্য বুঝবে না তা কি করে সম্ভব। আচ্ছা তাহলে আপনাদের টাইটানিক আর এই অলম্পিকের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা তালিকা দেই পড়ে দেখুন। এদের দুজনার বাহ্যিক আকৃতি এতটাই মিল যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
কি এবার বিশ্বাস হলতো যে এই “অলিম্পিক” আর “টাইটানিকের” মধ্যে কেমন মিল ছিল।
এখানে আবার কম্পার্টমেন্টের কথা মনে করিয়ে দেই। বলেছিলাম আগেই যে টাইটানিকে এই প্রযুক্তির প্রথম ব্যাবহার করা হয়। আর টাইটানিক কিন্তু বানানো হয়েছিল এই অলিম্পিকের পরে অর্থাৎ অলিম্পিকে এরকম কম্পার্টমেন্ট ব্যাবস্থা ছিল না।
ঘটনার শুরু হয় কিছুটা এরকম ভাবে, টাইটানিক আর অলিম্পিক ছিল White Star Line কম্পানির অধীনে। আর এই কম্পানির মালিক ছিলেন “জে.পি.মরগান” (J.P.Morgan)। একজন বিশিষ্ট চতুর ব্যাবসায়ি এবং ধনকবুর হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল তার।
কিন্তু তিনি কিছুটা আর্থিক সংকটে পরেন। তার কম্পানি “White Star Line” এর জাহাজ “অলিম্পিক” এর আকস্মিক দূর্ঘটনা ঘটে “হক” (Hawke) নামের আরেকটি জাহাজের সাথে। যদিও অলিম্পিকের ইন্স্যুরেন্স করানো ছিল কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কম্পানি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
![]() |
বামে “অলিম্পিক” এবং ডানে “হক” |
যার ফলে অলিম্পিককে পুনঃরায় চলাচলের উপযোগি করে তুলতে জে.পি. মরগানকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এর ফলে বেশ আর্থিক সংকটে পরেন তিনি। আবার সামনে তার নতুন জাহাজের উদ্ভোদন অনুষ্ঠান। চারিদিক থেকে বেশ চাপের উপর ছিলেন।
আগেই বলেছি তিনি কিন্তু বেশ চতুর একজন ব্যাবসায়ি ছিলেন। তিনি এসময় একটা কথা রটিয়ে দেন যে, তার কাছে যে পরিমান স্বর্ন আছে তা তিনি টাইটানিকে করে নিউয়র্কে নিয়ে যাবেন আর নতুন ভাবে ব্যাবসা শুরু করবেন। জাহাজের ব্যাবসায় তেমন একটা লাভ করতে পারছেন না তিনি। আর এরই সাথে তিনি তার সোনার ইন্স্যুরেন্স করিয়ে নেন। যদি সোনা চুরি যায় বা দূর্ঘটনায় নষ্টো হয় তাহলে ইন্স্যুরেন্স কম্পানি তাকে ৮ মিলিয়ন ডলার দিবে। সালটা ছিল ১৯১২ তখন ৮ মিলিয়ন ডলারের কেমন দাম তা শুধু একবার কল্পনা করে দেখুন।
রবিন গার্ডনার এর মতে, জে.পি. মরগান এক ভয়ংকর পরিকল্পনা করেন। জে.পি. মরগান চেয়ে ছিলেন টাইটানিকের বদলে যাবে অলিম্পিক, কেননা দেখে কেউ টাইটানিক আর অলিম্পিককে আলাদা করতে পারবে না। আর যেহেতু অলিম্পিক ইতি মধ্যেই কারখানায় আছে ঠিক করার জন্য তাই একে নতুন করে সকলের সামনে টাইটানিক বলে চালিয়ে দেওয়া অনেকটাই সহজ হবে। আর যাত্রা মধ্য পথে ছোট একটা দূর্ঘটনায় যদি জাহাজ ঢুবে যায় আর তাতে যদি সোনা থাকে তাহলে সোনা হারানোর ইন্স্যুরেন্স পাওয়া যাবে আবার টাইটানিকের ইন্স্যুরেন্সও পাওয়া যাবে। তিনি আসলেই সোনা পাঠিয়েছিলে কিনা তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আর পর্যাপ্ত পরিমান লাইফ বোট থাকলে যাত্রীদের বাঁচানো সম্ভব হবে। আর টাইটানিককে অলিম্পিক বলে চালানো যাবে, সাথে ব্যাবসাও হবে।
কিন্তু সব প্লান যে ঠিক মত সফল হইনি তার স্বাক্ষ্য ১৫১৭টি প্রান।

টাইটানিকের যে সকল যাত্রী বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন তারা কেউ বিশ্বাস করতে পারেন নাই যে শুধু মাত্র বরফে ধাক্কা খাবার কারনে এত বড় জাহাজ ডোবা সম্ভব। তাদের মতে, টাইটানিক যখন বরফের সাথে ধাক্কা খায় তখন হালকা শব্দ হয়েছিল। যদি বরফ খন্ডটি এত বেশি বড় থাকত তাহলে জাহাজটি ধাক্কা খাবার ফলে যাত্রীরা অবশ্যই অনেক জোড়ে শব্দ এবং কম্পন অনুভব করতেন। কিন্তু তারা এরকম কিছুই টের পাননি।
এবার কিছু যুক্তিতে আসি, কোন কারনে ৪৬,৩২৮ টনের টাইটানিক বরফের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার পাশের দিকে ছিদ্র হয়ে যায়। যার ফলে পানি ঢুকতে থাকে। তাহলে কম্পার্টমেন্ট গুলি বন্ধো করে দিলেই হত। জাহাজে গায়ে এত বড় ছিদ্র হয়নি যে তা সম্পূর্ন জাহাজের প্রতিটি কম্পার্টমেন্টে পানি ঢুকাতে পারবে। আচ্ছা কম্পার্টমেন্ট কি ছিল? অলিম্পিকে কিন্তু কম্পার্টমেন্ট ছিল না।
অলিম্পিককে যখন রেজিষ্ট্রেশন করানো হয় তখন এর ওজন ছিল ৪৫,৩২৪ টন কিন্তু ১৯১২ সালে টাইটানিক ঢুবির পরের বছর অর্থাৎ ১৯১৩ সালে অলিম্পিকের পুনঃওজন করা হয় রেজিষ্ট্রেশন নবায়নের জন্য। তখন এর ওজন হয় টাইটানিকের রেজিষ্ট্রেশন করা ওজনের সমান, অর্থাৎ ৪৬,৩২৮ টন। তাহলে কি ১৯১৩ সালের অলিম্পিকই আসল টাইটানিক?
আচ্ছা পানির নিচে টাইটানিককে খুঁজে বের করার মূল উদ্দেশ্য কি? ভাবনতো একবার যে জাহাজ ঢুবে গেছে সেই জাহাজ খুঁজে বের করতে কে টাকা নষ্টো করবে? সমুদ্রের অতল পানির গভীরে কতই না জাহাজ আছে। যদি না এই টাইটানিক থেকে তেমন আয় করা সম্ভব না হয়। এই সব খোঁজাখুঁজির মূল উদ্দেশ্য ছিল জে.পি.মরগানের হারিয়ে যাওয়া সোনা খুঁজে বের করা। বর্তমান বাজারে এর মূল্য কত একবার হিসাব করে দেখুন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা কিন্তু খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। আরে ভাই থাকলে না পাবে।
এবার চলুন এই টাইটানিক নিয়ে বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখে নেই যা আরো অনেক অজানা সত্যকে আপনার সামনে তুলে ধরবে,
৯/১১ আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ফলে যেমন এর মালিকের কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতি হয়নি তেমনি কথিত টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ফলেও এর মালিক জে.পি.মরগানের কোন আর্থিক ক্ষতি হয়নি। শুধু মাত্র মাঝখানে নিরীহ মানুষ তাদের জীবন দিয়েছে।
টাইটানিকের জীবনে আসলে কি হয়ছে তা হয়ত কোন দিন জানা যাবে না, কিন্তু সমুদ্রের নিচে এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে টাইটানিক ১৫ই এপ্রিলের সেই ১৫১৭ জন যাত্রীর মৃত্যুর সাক্ষি হয়ে।
সমুদ্রের নিচে টাইটানিক জাহাজ প্রথম আবিস্কার করেন “বালার্ড”। বালার্ড টাইটানিক আবিষ্কার করার পর থেকেই মানুষ সাবমেরিনে করে সেখানে ঘুরতে যায়। এই সাবমেরিনগুলো টাইটানিকের যে সব জায়গায় ল্যান্ড করে, সেসব জায়গাতে দাগ তো পড়েছেই, অনেক জায়গায় গর্তও হয়ে গেছে। আর মানুষ জাহাজ থেকে প্রায় ৬ হাজার জিনিস নিয়ে গেছে। এমনকি অনেকে নিয়ে গেছে জাহাজের টুকরোও!
তখন থেকেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের দাবি ওঠে। আর তাই ইউনেস্কো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষকে আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেই ঘোষণা করে দিয়েছে।
১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ, আমাদের ভীষণ আনন্দের দিন। সেদিন তো খুব আনন্দ করবেন। কিন্তু পরের দিন মনে করে টাইটানিকের সাথে ডুবে যাওয়া ১৫শ’ মানুষের কথাও স্মরণ করবেন। ঠিক ঠিক করে বললে ১৫১৭ জন।